বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:৩১:৪৬

চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ আর কতদিন থাকবে? যা জানাল আবহাওয়াবিদরা

চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ আর কতদিন থাকবে? যা জানাল আবহাওয়াবিদরা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঢাকাসহ বাংলাদেশের ৪৫টির বেশি জেলার উপর দিয়ে এখন তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। একইসাথে, দিনের গড় তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

ফলে তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় সারা দেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই সোমবার আবারও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ বা তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি মাসে এ নিয়ে টানা তৃতীয় দফায় ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করা হলো।

গেল দুসপ্তাহে যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা গেছে। বর্তমানে পাবনা ও চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ ছাড়া রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর এবং কুষ্টিয়ায় তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে।
এর বাইরে, ঢাকা, রাজশাহী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা এবং বরিশালসহ আরও কয়েকটি জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই এপ্রিল মাসে গড়ে সাধারণত দুই-তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দু’টি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। কিন্তু এবছর তীব্র তাপপ্রবাহ অনুভূত হওয়ায় ইতোমধ্যেই তিনটি হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেও নতুন হিট এলার্ট জারি করতে হতে পারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ আলম বলেন, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে গড়ে তাপমাত্রা থাকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এ বছর সেটি বৃদ্ধি পেয়ে গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে সারাদেশেই তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে।

তিনি বলেন, সামনে গড় তাপমাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে এটি বাংলাদেশের উষ্ণতম বছরও হতে পারে।

এদিকে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম হচ্ছে। ফলে গরম থেকেই যাচ্ছে। তবে ভারি বৃষ্টিপাত হলেই গরম কেটে যাবে বলেও জানান এ আবহাওয়াবিদ।

তবে আবহাওয়াবিদ শাহ আলম বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুব কম। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে মৌসুমী বায়ু না আসায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এ বছর মৌসুমী বায়ু আসতে দেরি হওয়ায় ভারি বৃষ্টিপাতের জন্য জুন মাস পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হতে পারে।

তবে আগামী শুক্রবারের মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও হালকা দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে পরিমাণ কম হওয়ায় সেই বৃষ্টিপাত গরম কমানোর ক্ষেত্রে খুব একটা কাজে আসবে না বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।

বৃষ্টিপাত শুরু হতে দেরি হওয়ায় এবছর তাপপ্রবাহ সহসাই থামবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ শাহ আলম। তিনি বলেন, সামনে আরও তাপপ্রবাহ আসছে এবং পুরো মে মাসজুড়ে সেটি চলতে পারে। এমনকি তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল আগের বছরগুলোকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এদিকে তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, অনেকদিন ধরে তাপপ্রবাহ চলতে থাকলে কোনো কোনো এলাকার বায়ুরচাপ কমে যায়। এতে সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প বাতাসের কোথাও জড়ো হতে শুরু করে এবং তখন সেখানে বজ্রমেঘ তৈরি হয়। পরবর্তীতে সেই মেঘ বৃষ্টিপাত ঘটায়।

তাপপ্রবাহের বিষয়ে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। দেশের ওই অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের অবস্থান। এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করে।

আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গত বছর ভারতের ওইসব অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়।

তিনি জানান, এই আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী এ বছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে।

এ ছাড়া বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়া, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং শিল্পায়ন ও নগরায়ন বেড়ে যাওয়ার কারণেও সার্বিকভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে